• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

ক্ষতির মুখে দিনাজপুরের মৌ খামারীরা 

প্রকাশিত: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

ভরা মৌসুম জুড়েই শৈত্য প্রবাহ আর কুয়াশার কারনে এবার ক্ষতির মুখে পড়েছেন দিনাজপুরের মৌ খামারীরা। তীব্র শৈত্য প্রবাহে একদিকে মৌমাছির মৃত্যু অন্যদিকে সরিষার ফুলের পাপড়ী ভেজা থাকায়  লক্ষ্যমাত্রার ১০ শতাংশ মধুও আহরণ করতে পারেননি তারা। সরিষায় ধরা খেয়ে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এখন লিচুর মুকুল থেকে মধু আহরনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলা মৌচাষীরা।

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমের দিনাজপুর জেলায় ২৭ হাজার ১৯৭ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়। প্রতিবছর দিনাজপুরে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সরিষার আবাদ হওয়ায় এই সরিষার ফুল থেকে বিপুল পরিমান মধু আহরণ করে জেলার মৌ খামারীরা। জেলার মৌ খামারীরা এবারও এই সরিষা ক্ষেত থেকে মধু আহরণের ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়। সরিষা ক্ষেতে স্থাপন করে মৌ বাক্স।

কিন্তু মৌসুম পেরিয়ে গেলেও এবার কাংখিত লক্ষ্যমাত্রার ১০ শতাংশ মধুও আহরণ করতে পারেননি জেলার মৌ খামারীরা। খামারীরা জানান, এবার সরিষার ভরা মৌসুমে অব্যাহত শৈত্য প্রবাহ আর ঘন কুয়াশা বিরাজ করছিলো। ঘন কুয়াশার কারনে এবং দীর্ঘ সময় রোদ না থাকায় সরিষা ফুলের পাপড়ি পচে নষ্ট হয়ে যায়। সরিষা ক্ষেতে মৌ বাক্স স্থাপন করা হলেও টানা শৈত্যপ্রবাহ ও তীব্র শীতের জন্য বাক্স থেকে মৌমাছি বের হতে পারেনি। ফলে মৌসুমের মধু সংগ্রহের জন্য দুই মাস সময় পার হয়ে গেলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে লক্ষ্য অনুযায়ী তারা মধু সংগ্রহ করতে পারেননি। শুধু তাই নয়, বৈরী এই আবহাওয়ার জন্য হাজার হাজার মৌমাছি মরে গেছে। একদিকে কাংখিত মধু আহরণ করতে না পারা এবং অন্যদিকে বিপুল পরিমান মৌ মাছি মরে যাওয়ায় আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন জেলার মৌ খামারীরা।

মৌ খামারী রাকিব হোসেন জানান, তার প্রায় ৪০টি মৌ বাক্স ছিলো। বৈরী আবহাওয়ার কারনে মৌ মাছি মরে যাওয়ায় এখন অর্ধেক বাক্সে পরিনত হয়েছে তার খামার। তিনি বলেন, একটি মৌমাছির জন্ম হতে প্রায় ২২ থেকে ২৫ দিন সময় লাগে। মরে যাওয়া মৌমাছির সংখ্যা বাড়াতে তাকে বেশ বেগ পোহাতে হবে। মৌ চাষী রাকিব জানায় প্রথমে বীরগঞ্জে এবং পরে হাকিমপুরের হিলিতে সরিষা ক্ষেতে খামার স্থাপন করতে সব মিলিয়ে তার ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। মধু তো দুরের কথা, এই তিন লাখ টাকাই তার ক্ষতি।

একই রকম কথা জানান দিনাজপুর জেলার অন্যান্য মৌ খামারীরা। মৌ খামারীরা জানান, সরিষায় এবার ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়লেও এই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবেন আসন্ন লিচুতে। যদি বৃষ্টি বা প্রতিকুল আবহাওয়া না হয়, তাহলে লিচুর মুকুল থেকে মধু সংগ্রহ করে তারা এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা করছেন।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন—বিসিক এর মৌমাছি পালন কর্মসূচীর সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রুহুল আমীন জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারনে সরিষা ক্ষেত থেকে এবার মৌ খামারীরা সন্তোষজনক মধু আহরণ করতে পারেননি। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।

তিনি বলেন, আগামী লিচুর মুকুল আসছে। তাই মৌচাষীদের বাক্স সংখ্যা বাড়িয়ে লিচুর মুকুল থেকে মধু আহরণ করার জন্য মৌ চাষীদের পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।  যদি আবহাওয়া অনুকুলে থাকে, তাহলে লিচুর মুকুল থেকে মধু আহরণ করে ক্ষতিটা পুষিয়ে নিতে পারবেন মৌ চাষীরা।

রুহুল আমীন জানান, দিনাজপুর জেলায় তালিকাভুক্ত ৩০ জন মৌ চাষী রয়েছেন। কিন্তু লিচুর সময় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দেড় শতাধিক মৌ চাষী আসেন মধু সংগ্রহ করতে। এই জেলায় মধু শিল্পের জন্য ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

– দিনাজপুর দর্পণ নিউজ ডেস্ক –